পানির মধ্যে সারি সারি বাশের খুটি লাল আর সবুজ রংঙের ঝিলকিনের মাঝ খানে পানিতে ৭০টি আড়াই শ লিটারের ড্রামের ওপর ভাসছে ১৯৮ ফুট দীর্ঘ একটি ভাসমান সেতু।
আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সহজ করেছে এটি। কয়রার পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সদস্যরা প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠ জোড়া লাগিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
সেতুটি দেখতে প্রতিদিন এখানে অনেকে ভিড় করছে। সেতুটি নির্মান করা হয়েছে খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী খালের ওপরে। পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সভাপতি অভিজিৎ মহলদার বলেন, পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সকল সদস্যরা ও সুন্দরবন কোয়াশিনের মাধ্যমে দাতা সংস্থা শেয়ার ট্রাষ্ট ও স্টাট ফান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় সিএনআরএস এর তত্ববধানে গত ১৫ মার্চ ভাসমান সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। গত ২ এপ্রিল দুপুরে নির্মাণকাজ শেষ হয়।
সেতৃটি উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম, সুন্দরবন কোয়ালিশনের ব্যাবস্থাপক মোঃ সাইদুর রহমান ও সিএনআরএস প্রতিনিধি মোঃ হারুন অর-রশিদ। এরপর গত মঙ্গলবার সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
খুলে দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেতুটির চিত্র ছড়িয়ে পড়লে শত শত উৎসক জনতা দেখতে ভীড় জমাচ্ছে সেখানে। অভিজিৎ মহলদার বলেন,১৯৮ ফুট দৈঘের্যর সেতুটি নির্মাণ করতে ৭০ টি আড়াই শ লিটারের প্লাস্টিকের ড্রাম, ১৩০ সিএফটি শিরীষ কাঠ, ৩০টি বাঁশ এবং ২০ কেজি পেরেক ব্যবহার করা হয়েছে। সেতুটির কাজ শেষ করতে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ সাত হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২২০ মিটার চওড়া একটি খাল আছে, যেটি পাথরখালী খাল নামে পরিচিত। খালটির দুই পারে পাঁচটি গ্রাম।
গ্রামগুলোর মানুষ চলাচলের জন্য এত দিন নৌকার ওপর ভরসা করত। খালের উত্তর পারের বতুলবাজার, পাথরখালী, মাঝেরপাড়া গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দৈনন্দিন হাটবাজারের জন্য নৌকায় করে দক্ষিণ পারের রত্নাঘেরী গ্রামে, পাথরখালী উত্তরপাড়া ও বড়বাড়ী বাজারে আসতে হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ পারের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, মৎস্য কাজ, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ওপারে যায়।
এই পাঁচ গ্রামের মানুষের যোগাযোগের ভোগান্তির কথা ভেবে ভাসমান সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক দীনবন্ধু মন্ডল বলেন, পাথরখালী খালের ওপর একসময় একটি সেতু ছিল। সেতুটি ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় ভেঙে যায়। সে কারণে খালের দুই পারের মানুষের চলাচলে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। মানুষের ভোগান্তী লাঘবে তৈরী করা হলো এই ভাসমান সেতু। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানী বলেন, এই ভাসমান সেতু দিয়ে প্রতিদিন অনেক লোক যাতায়াত করতে পারবে।
এ ধরনের কাজের জন্য স্থানীয় যুবকদের উৎসাহী করা হবে। সেতু পেয়ে দারুণ খুশি এলাকাবাসী। মাঝের পাড়া গ্রামের মহিবালা মুন্ডা বলেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা এখানে ছিল না। কী যে কষ্ট ছিল, সেটা কেবল এ অঞ্চলের মানুষই বুঝতে পারবেন।
সেতুটি হওয়ায় মানুষের অনেক উপকার হয়েছে। কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মমিনুর রহমান বলেন, এলাকার যুবকেরা সম্মিলিতভাবে অল্প সময়ের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাসমান সেতুটি নির্মাণ করেছে।
তাদের এই উদ্যোগ নিশ্চই একটি ভাল কাজ, তবে পাথরখালী খালের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ভাবে একটি সেতু নির্মাণ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply