নিজস্ব প্রতিনিধি“এনজিও হলো বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। সরকারের একার পক্ষে সমগ্র দেশ বা এই উপকূল কে দারুণভাবে সাজানো সম্ভব না। তার জন্য এনজিওদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি শ্যামনগরে যোগদান করেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বারসিক এর কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখানে আসার আগেও বারসিক এর কর্মকান্ড সম্পর্কে আমি অবগত। উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে পদ্মপুকুর এর নাসরিন নাহার সহ অন্যান্য নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে। তারা যেমন নিজেরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেরা আত্মনির্ভরশীল হয়েছে পাশাপাশি নিরাপদ কৃষি কাজের সাথে সরাসরি জড়িত থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে”। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের সফলতা ও জ্ঞানের কথা নিয়ে অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন শ্যামনগরের নব যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় উপজেলার কৃষি অফিসের হল রুমে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও সবুজ সংহতির উদ্যোগে উপকূলের নারীদের সফলতা ও জ্ঞানের কথা বিষয়ক অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ধুমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠন এর সভানেত্রী কৃষাণী অল্পনা রাণী মিস্ত্রি।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান, উপজেলা প্রাণী সম্পদ ও ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ সুব্রত কুমার বিশ্বাস, সিডিও’র নির্বাহী পরিচালক গাজী ইমরান, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের জেন্ডার প্রমোটর মো. মাছুম বিল্লাহ, বারসিক এর সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার।
এর আগে উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের সফলতা নিয়ে অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন পদ্মপুকুরের নাসরিন নাহার, গাবুরার জেসিমন বেগম, ঈশ্বরীপুরের মিতা রানী, শ্যামনগরের অষ্টমী মালো, মুন্সিগঞ্জের সরমা রাণী, বুড়িগোয়ালিনীর কনিকা রানী মন্ডল প্রমুখ।
নারী বক্তারা বলেন, নারীরা পারিবারিক অসচ্ছলতার মধ্যে দিয়েও নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। রাসায়নিক সার কীটনাশকের সময়ে জৈব সার ও জৈববালাইনাশকের ব্যবহার, দেশীয় বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, অচাষকৃত শাকসবজি সংরক্ষণ, শিম, বেগুন, মরিচ জাত সংরক্ষণ করে কৃষিতে অনন্য অবদান রাখার চেষ্টা করছেন। একদিকে যেমন নারীরা নিজেরা দক্ষ হয়ে উঠছে, অপরদিকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। কৃষি ও সামাজিক কাজের জন্য উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কার প্রাপ্তি, সরকারি সম্মাননা, অনন্যা নারী-১০ পুরস্কার, প্রথম আলো,ডেইলি স্টার ও সিটি গ্রুপের সৌজন্যে সম্মাননাসহ নানা ধরনের পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা তথা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা শ্যামনগর। যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙ্গন, লবণাক্ততা, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ তো আছে তারই পাশাপাশি নারীদের অগ্রগতির পথে রয়েছে নানাবিধ সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নিয়মের বেড়াজাল, যা নারীকে ভিতর থেকে করে তোলে ভীতসন্ত্রস্ত ও পরনির্ভরশীলতা। তবে বর্তমানে নারীরা প্রাকৃতিক দূর্যোগকে মোকাবেলা করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্ব জয়ে অংশ নিচ্ছে, ভূমিকা রাখছে কৃষি, প্রাণবৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে।
অভিজ্ঞতা বিনিময় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক এর সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা বরসা গাইন
Leave a Reply