মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার : মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জসিম মিয়া ও জয়নাল মিয়ার পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গত শুক্রবার ২৮ জুলাই অনুমান ২ঘটিকার সময় জসিম মিয়ার বড় ভাই হাসেম মিয়া ও তার স্ত্রীর মধ্যে ছাগলের খাবার দেয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়।
কথা-কাটাকাটির বিষয়টি পাশের বাড়ির জয়নাল মিয়ার মেয়ে ঝর্ণা গিয়ে বাড়িতে গিয়ে বললে তার মা ছোট ছড়া পার হয়ে এসে রাস্তায় হাসেম মিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে হাসেম মিয়া ও জসিম জানান।
গালাগালির এক পর্যায়ে জসিম ও হাসেমের মা শ্যামেলা খাতুন জয়নাল মিয়া ও তার পরিবারকে বলেন হাসেম তোমাদের গালিগালাজ করেনি সে তার বউকে গালিগালাজ করেছে। তোমরা ঝগড়াঝাটি করো না।
একপর্যায়ে জয়নাল মিয়া, তার ছেলে কাওছার মিয়া, স্ত্রীসহ ছড়া পার হয়ে জসিম মিয়ার বাড়ির প্রাঙ্গণে এসে জসিম মিয়া ও তার ভাই হাসেম মিয়ার উপর দা লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
এসময় জসিম মিয়ার মা শ্যামেলা খাতুন এগিয়ে আসলে বৃদ্ধ মহিলার হাতে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে এবং জসিম মিয়ার বাম হাতে দা দিয়ে কোপ দেয় জয়নলা মিয়ার ছেলে কাওছার মিয়া। এছাড়া শরীরে কয়েকটি স্থানে আঘাত করে।
হাসেম মিয়ার উপর স্টিলের পাইপ দিয়ে শরীরের কয়েকটি স্থানে বাড়ি মারা হয় বলে তারা জানান। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন আহত জসিম মিয়া, হাসেম মিয়া ও তাদের মা মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। জসিম মিয়া’র অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় সিলেট এম এ জি উসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, জসিমের বাম হাতে ৭টি সেলাই লেগেছে, হাড় এবং রগ কেটে যাওয়ার আশংকা করছি তাই জসিম মিয়াকে রেফার করা হয়েছে। সিলেট এম এ জি উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জসিম মিয়ার, বাম হাতের হাড় ভেঙ্গে গেছে এবং ৭টি সেলাই রয়েছে।
এছাড়া শরীরের কয়েকটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এব্যাপারে সরজমিনে, জসিম মিয়ার বাড়িতে গেলে হাসেম মিয়ার মা ও হাসেম মিয়া এবং তার স্ত্রী বলেন যে, প্রায়শই জয়নাল মিয়া ও তার পরিবারের লোক আমাদের গালিগালাজ করে। এর পূর্বেও আমাদের বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করে অথচ তারা বারবার আমাদের সাথে ঝগড়াঝাটি করার জন্য চেষ্টা করে এবং বলে এই এলাকা থেকে তদের বিদায় করে ছাড়বো। গুরুতর আহত জসিম মিয়ার স্ত্রী শাহেনা বেগম বলেন, জয়নাল মিয়া ও তার পরিবার প্রায়শই গালাগালি করে এবং বলে তদের এখান থেকে বিদায় করবো না হয় মেরে ফেলবো।
সরজমিনে জয়নাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে জয়নাল মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, হাসেম ও জসিম প্রায়শই গালাগালি করে। গত শুক্রবার আমার মেয়ে ঝর্ণা বেগম তার মেডামের বাড়িতে আসার সময় হাসেম মিয়া তাকে গালাগালি করে। মেয়ে এসে এ কথা আমাদের বললে আমরা তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে গালাগালি করে একপর্যায়ে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়।
জয়নাল মিয়া বলেন, তারা বাশ ও লাঠি নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমি ও আমার স্ত্রী আহত হই । আমার স্ত্রী মাথার পাশে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে বলে তিনি ছবি বের করে দেখান। কে মেরেছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন তারা মেরেছে কিন্তু কে মেরেছে বলতে পারছি না মারামারির সময় খেয়াল করিনি।
জয়নাল মিয়ার ছেলে কাওছার মিয়াকে দা দিয়ে কোপ মারার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলে আমি দা দিয়ে কোপ মারিনি আমি পাইপ দিয়ে মেরেছি।
সরজমিনে জয়নাল মিয়ার বাড়িতে উপস্থিত থাকা হাজী ছাদ উল্লা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আরিফ উনার পরিচয় দিয়ে বলেন, ঝর্ণা আমার মাদ্রাসার ছাত্রী তাই আমি এসেছি সত্য কথা বলতে। সত্য কথা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার ছাত্রী ঝর্ণাকে হাসেম মিয়া খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেছে এবং আবার তাদের মারধোর করেছে।
এর পূর্বেও একদিন খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেছিল সেটা আমার ছাত্রী আমাকে বলেছে। তবে কোন ঘটনায় আমি উপস্থিত ছিলাম না পরে শুনেছি মারামারির হয়েছে পরে আমি এসেছি এবং সাংবাদিক হোসাইন ভাইকে কল করে বলেছি এই বিষয়ে নিউজ করার জন্য। তিনি আসেন নি আপনারা এসেছেন সে জন্য ধন্যবাদ।
এব্যাপারে এলাকার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, তারা কেন মারামারি করেছে জানিনা তবে দেখিনি শুনেছি দুই পক্ষই আহত হয়েছে আমরা বলেছি চিকিৎসা করো পরে দেখা যাবে।
জয়নাল মিয়াকে কোন মামলা করেছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন আমি ঘটনার দিন শুক্রবারেই জসিম ও হাসেমের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছি।
হাসেম মিয়াকে মামলা করেছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন আমার ভাই জসিম গুরুতর আহত থাকায় আগে উসমানীতে নিয়ে যাই পরের দিন শনিবার আমরাও একটা অভিযোগ দাখিল করেছি কমলগঞ্জ থানায়।
হাসেম মিয়া বলেন আমরা মার খাওয়ার পর হাসপাতালে যাওয়ার সময় আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার শিপন সাহেবকে পেয়ে ঘটনা বলি। পরে তিনি বলেন তোমরা আগে চিকিৎসা করাও তারপর দেখা যাবে।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শাহান পারভেজ শিপন দুদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে প্রথম দিন মুঠোফোন বলেন আমি রোগী নিয়ে ব্যস্থ আছি পরে কথা বলবো তারপর তিনি আর কল করেন নি। ১জুলাই মুঠোফোনে আবারও যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।
রহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: ইফতেখার আহমেদ বদরুলের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি উক্ত জসিম মিয়া ও জয়নাল মিয়ার মধ্যে মারামারির বিষয় তিনি অবগত নন। তারা যদি বিচারের জন্য আসতো বা যোগাযোগ করতো তাহলে অবশ্যই বিষয়টি সুষ্ঠু ভাবে বিচারের ব্যবস্থা করতাম। যেহেতু উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ করেছে তাহলে আইনী পর্যায়েই তারা দেখুক।
এই বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার উক্ত এলাকার অফিসার এস আই মহাদেবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, জয়নাল মিয়া একটা লিখিত অভিযোগ করেছেন আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরে জানতে পেরেছি জসিম মিয়ার পক্ষ থেকেও একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে।
যতটুকু জেনেছি তারা উভয় একে অপরের আত্মীয়। যদি স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়টি শেষ না হয় তাহলে উভয় অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা করা হবে।
উক্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাজী ছাদ উল্লা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাচ্চু’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, উভয় পক্ষ আক্রোশপ্রসূত মনোভাব নিয়ে আছে। আমি রহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: ইফতেখার আহমেদ বদরুলের সাথে কথা বলে বিষয়টি আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করবো।
Leave a Reply