প্রথম পার্ট-ঃ
ডলফিন ও তিমি সারাজীবন পানিতে কাটায়। এরা কিন্তু মাছ নয়। এরা আমাদের মতই স্তন্যপায়ী প্রাণী ও বাতাস থেকে শ্বাস নেয়। শ্বাস নেয়ার জন্য এদেরকে অবশ্যই পানির উপর ভেসে উঠতে হয়। পানির নিচে আটকা পড়লে এরা দমবন্ধ হয়ে মারা যায়।মা ডলফিনরা জীবন্ত বাচ্চা জন্ম দেয়- এদেরকে জিতে কাফ বলা হয়। মা ডলফিন বাচ্চাদের দুধ পান করায় এবং যতদিন পর্ যন্ত বাচ্চারা স্বাবলম্বী না হয় (অর্থাৎ নিজেরা নিজেদের দেখাশোনা করতে না পারে) ততদিন এদের যত্ন নেয়।সামুদ্রিক ডলফিনরা দল বেঁধে মাছের ঝাঁককে একত্ রিত করে শিকার করে। এভাবে খুব সহজেই ধারালো দাঁতের মাধ্যমে এরা মাছ ধরতে পারে।
মাছ ও ডলফিনের পার্থক্য বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এর লেজের দিকে তাকানো। ডলফিনের লেজ আড়াআড়ি যা উপরে-নিচে নড়ে। মাছের লেজ খাড়া যা পাশাপাশি নড়ে।
বাংলাদেশ তার ক্ষুদ্র জলসীমায় ডলফিন ও তিমির এ ক অসাধারণ বৈচিত্র্যকে ধারণ করছে। বিশ্বের ৮০টিরও বেশি প্রজাতির ডলফিন-তিমির মধ্ যে বাংলাদেশেই পাওয়া গেছে ১০ প্রজাতি।
বেশিরভাগ ডলফিনই আমদের উপকূলীয় জলাশয়ে এবং অ তলস্পর্শ বা সোয়াচ- অব-নো- গ্রাউন্ড নামক গভীর গি রিখাতে বাস করে। এদের মধ্যে কিছু ডলফিন বাস করে জোয়ার-ভাটা প্রব ণ সুন্দরবনের নদ-নদীতে। আর শুশুক বাস করে সুন্দরবনসহ আমাদের অন্যান্য ন দীসমূহে।বাংলাদেশে মিষ্টি পানির উপর নির্ভরশীল দুই ধরনের ডলফিন দেখা যায়: শুশুক এবং ইরাবতি ডলফিন।
বাংলাদেশ এবং উত্তরে ভারত ও নেপালের অনেক নদীতে শুশুক দেখা যায়। এরা সাধারণত নদীর বাঁকে ও মোহনায় একাকি বা ছোট ছোট দলে থাকে।
বেশিরভাগ ডলফিনই ভালভাবে দেখতে পায়, তা সত্ত্বেও চলাচল, একে অপরকে খুঁজে পেতে এবং মাছ ধরতে এরা শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে।।
এই পদ্ধতিকে বলা হয় ইকোলোকেশান। ডলফিনদের এই ক্ষমতা আর বাদুরের শব্দের সাহায্য দেখা একই রকম।
শুশুকরা প্রায় অন্ধ এবং ঘোলা নদীতে চলতে ** ও মাছ শিকার করতে এরা পুরোপুরি ইকোলোকেশন বা প্রতিধ্ব নিত শব্দের উপর নির্ভর করে। এদের আছে ছোট্ট চোখ এবং এই অসংখ্য ধারালো দাঁতসহ লম্বা চোয়াল। এদের সামনের পাখনাগুলো বড় ও ঘাড় নমনীয়।
আমাদের জলাশয়ে কোন রকম অস্বাভাবিকতা বিশেষ করে অতিরিক্ত মাত্রায় মাছ আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে সৃষ্ট যে কোন পরিবর্তনের বার্তা বহন করে ডলফিন ও তিমিরা।আমাদের মতই এদেরও পরিষ্কার পানি এবং পর্যাপ্ত মাছের প্রয়োজন।
ডলফিন ও তিমিরা আজ আমাদের জন্যই বিপদের মুখে। প্রতি বছর মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে পানিতে ডুবে গিয়ে অনেক ডলফিন ও তিমি মারা যায়। ব্যাপকহারে মশারি জাল ব্যবহার করে চিংড়ি পোনা ধরার কারণে এদের খাবারের পরিমাণ আশংকাজনকহারে ক মে যাচ্ছে।
নদীর ডলফিনরা বিশেষভাবে বিপদাপন্ন কারণ আপামর জনতা নদীর পানিকে দূষিত করছে, আবার উজানে বাঁধ নির্মাণ করে প্রজননের জন্য ডলফিনদের একত্রিত হতে দিচ্ছে না।
হাঙ্গরেরা আমাদের জলাশয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্ য বজায় রাখে। এরা মূলত দুর্বল ও অসুস্থ মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে, কারণ এ ধরনের মাছ সহজেই ধরা যায়। হাঙ্গর হারিয়ে গেলে অন্য অনেক মূল্যবান মাছ ও হারিয়ে যাবে।
দুঃখের বিষয় হল আমাদের জলাশয় থেকে আশংকাজনকভাবে হাঙ্গরেরা হারিয়ে যাচ্ছে। ইলিশের জালের মত অন্যান্য মাছ ধরার জালে নির্বি চারে অসংখ্য হাঙ্গর মারা পড়ছে।
হাঙ্গরদের হারিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে এদের পাখনা। রেষ্টুরেন্টে হাঙ্গরের পাখনার স্যুপ তৈরীর জন্য জেলেরা হাঙ্গরের পাখনা কেটে সরবরাহ করে। চীনের কিছু মানুষ খুব দাম দিয়ে স্বাদহীন, -পুষ্টিহীন এই স্যুপ খেয়ে থাকে।পঞ্চাশের বেশি জাতের হাঙ্গর বাংলাদেশে পাওয়া যায়, যার দুই তৃতীয়াংশের বেশি হুমকির সম্মুখীন। এর মানে হল এরা চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে।
শাপলাপাতা মাছ
শাপলাপাতা মাছেরা চ্যাপ্টা, এদের বিস্তৃত পাখনা আছে।
এদের চোখ মাথার চূড়ায় থাকে আর মুখ, নাক ও পাঁচজোড়া ফুলকা নিচের দিকে থাকে। এরা পাখির ডানার মত পাখনা ঝাপ্টে সাঁতার কাটে।
হাঙ্গরের সাথে শাপলাপাতা মাছের অনেক মিল আছে। হাঙ্গরের মত, এদের কঙ্কাল নরম হাড় বা তরুণাস্থি দিয়ে তৈরি। এরা ঝিনুক, শামুক, চিংড়ি, কাঁকড়া এবং ছোট মাছ। এরাও শক্তিশালী ঘ্রাণশক্তির সাহায্যে শিকার।
শাপলাপাতা মাছ দীর্ঘজীবী প্রাণী এবং তুলনামূলক ভাবে কম বাচ্চা জন্ম দেয়। তাই অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এদের জন্য বড় ক্ষতিকর ।
এই মাছ দেখতে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার পাতার মতো। বাংলাদশেরে মানুষ তাই এদের ‘শাপলাপাতা মাছ’ বলে।
বাংলাদেশে সত্তর এর বেশি জাতের শাপলাপাতা মাছ পাওয়া যায়, যার অধিকাংশই (প্রায় ৮৫ ভাগ) হুমকির ম্মুখীন।
হাঙ্গরেরা এক ধরনের মাছ। কিন্তু সাধারণ মাছের মত এদের কোন শক্ত হাড় বা কাঁটা নেই। এর রয়েছে তরুণাস্থি নির্মিত কঙ্কাল যা আমাদের নাক ও কানের নরম হাড়ের মত। হাঙ্গরেরা অন্যান্য মছের মত ফুলকা দিয়ে শ্বাস নেয়, কিন্তু এর জন্য এদেরকে মুখ খুলে পানিতে সাঁতার কাটতে হয় যেন ফুলকার মধ্যে দিয়ে পানি যেতে পারে। তাই ভেসে থাকার জন্য এবং নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য হাঙ্গরকে সবসময় সাঁতার কাটতে হয়।
হাঙ্গরেরা গন্ধ, স্বাদ ও শোনার মাধ্যমে অনেকের শিকারকে সনাক্ত করতে পারে। অন্যান্য মাছের মত এদের শরীর ও মাথায় সংবেদনশীল ইন্দ্রিয় আছে যা শিকার ধরতে সাহায্য করে।
বাঘা হাঙ্গরের বড় চোখ থাকে
হাঙ্গরের চামড়া দাঁতের মত তীক্ষ্ণ আঁশ দিয়ে ঢাকা থাকে। এই আঁশগুলো একটি শক্ত বাহ্যিক আবরণ তৈরি করে যা এদেরকে শিকারীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আর এই শিকারীদের বেশিরভাগই হল অন্যান্য জাতের হাঙ্গর। হাঙ্গরের ছোট চোখ থাকে যেসব হাঙ্গরেরা পরিষ্কার পানিতে বাস করে তাদের রয়েছে বড় বড় চোখ আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি আর যারা শুধুমাত্র নদীর ঘোলা পানিতে বাস করে তাদের রয়েছে ছোট ছোট চোখ। এরা মূলত পানিতে চলাচল ও খাবার শিকার করতে অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের উপর নির্ভরশীল।
হাঙ্গরের পাখনাগুলো অনমনীয়।
এবং সাধারণ মাছের মত শরীরের সাথে বাঁকানো। হাঙ্গরের পিঠের, পেটের আর দুই পাশের পাখনাগুলো এদিক-সেদিক ঘুরতে ও শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
লেজের পাখনা ডানে ও বামে নড়াচড়ার মাধ্যমে হাঙ্গর সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
হাঙ্গরেরা ধীরে ধীরে বড় হয় এবং অল্প সংখ্যক বাচ্চা দিয়ে থাকে। এর মানে হল হাঙ্গরদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অনেক লম্বা সময়ের দরকার হয়।
অনেক হাঙ্গরই বাচ্চা জন্ম দেয়, আর এই বাচ্চাদের কে পাপস্ বলা হয়।
কিছু হাঙ্গর খোসাসহ ডিম পারে, ডিমের ভিতরে বাচ্চা বড় হয়। এই সুরক্ষিত খোলসগুলো বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। এগুলো প্রায়ই ম্যানগ্রোভ গাছের শিকড়ে আটকে থাকতে দেখা যায়।
জন্মের পর হাঙ্গরের বাচ্চাদের মায়ের কাছ থেকে আর কোন যত্ন-আত্তির প্রয়োজন হয় না।
Leave a Reply