সাতক্ষীরার শ্যামনগরে প্যাথলজি সেন্টারের ভুল পরীক্ষার সুত্র ধরে সদ্য মা হওয়া এক নারীর শরীরে ভিন্ন গ্রপের রক্ত পুশ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নানান শাররীক জটিলতা দেখা দেয়ায় ডিজি ল্যাব নামীয় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে তার মালিকসহ কর্মচারীরা পালিয়ে গেছেন। এমন ঘটনার প্রতিকার দাবি করে ভুুক্তোভোগী নারীর পরিবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। কদমতলা গ্রামের আঞ্জুয়ারা খাতুন নামের ২৭ বছর বয়সী ঐ নারীকে উপজেলা সদরের একটি ব্যক্তিগত হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আঞ্জুয়ারা খাতুনের ভাই বিলাল হোসেন জানায় গত ৩০ মার্চ মধ্য রাতে তার বোনের প্রসব বেদনা শুরু হলে শ্যামনগর সদরের মডার্ণ ক্লিনিকে নেয়া হয়। একপর্যায়ে সিজারের সিদ্ধান্ত হলে রক্ত সংগ্রহের নির্দেশনা পেয়ে এক দালালের সহায়তায় তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসংলগ্ন ডিজি ল্যাব নামীয় প্যাথলজিতে যোগাযোগ করেন। এসময় প্রতিষ্ঠানের মালিক মিজানুর রহমান নিজে নমুনা সংগ্রহ করে গ্রপ নির্নয়ের পর তা ‘এ’+ পজেটিভ নিশ্চিত করে একই গ্রপের ডোনার খুঁজতে বলেন।
বিলাল হোসেনের অভিযোগ ৩১ মার্চ ‘এ’+ পজেটিভ রক্তের ডোনার নিয়ে ডিজি ল্যাবে যাওয়ার পর সংগৃহীত ও রোগীর রক্তের ‘ক্রস ম্যাচ’ শেষে তাদেরকে এক ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করা হয়। একপর্যায়ে রক্ত পুশের পর নানান উপস্বর্গ দেখা দেয়ায় অপর একটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করা হলে আঞ্জুয়ারার রক্তের গ্রপ ‘বি’+ পজেটিভ বলে জানানো হয়। এসময় পুনরায় ডিজি ল্যাবে নিয়ে গ্রপ নির্নয়ের পর রক্তের গ্রপ ‘বি’+ পজেটিভ বলে তাদের নিশ্চিত করা হয়। তবে প্রথমবার ভুল রিপোর্ট দেয়ার কারন জানতে চাইলে তারা বিষয়টি ‘ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন”। তিনি আরও অভিযোগ করেন যাবতীয় পরীক্ষা নিজে করলেও প্রতিবেদনপত্রে জনৈক রবিউল হাসান নামের একজন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট এর নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।
ভুক্তোভোগী আঞ্জুয়ারা খাতুনের অপর ভাই আব্দুল করিম জানান ভিন্ন গ্রপের রক্ত দেয়ার পর থেকে তার বোন নানান জটিলতায় ভুগছে। বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার সকাল থেকে প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে মালিক ও কর্মচারীরা পালিয়ে গেছে। ভুল প্রতিবেদন দেয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়ে তারা জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনসহ শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
প্রতিবেদনপত্রে স্বাক্ষর ও সিল থাকা মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রবিউল হাসান বলেন তিনি দুই বছর আগে ডিজি ল্যাব থেকে চলে গেছেন। বেআইনীভাবে তার নাম সিল ব্যবহারের ঘটনায় তিনি আইনের দারস্থ হবেন।
ডিজি ল্যাবের মালিক পল্লী চিকিৎসক মিজানুর রহমান জানান প্রথম পরীক্ষা ভুল হয়েছে বলে তিনি রোগীর স্বজনদের কাছে মাফ চেয়েছেন। অপর টেকনোলজিষ্টের নাম সিল ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, রবিউল হাসানের পরামর্শে তার নাম ও সিল ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে তার প্যাথলজি সেন্টার এখনও অনুমোদন পায়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জিয়াউর রহমান বলেন ভুক্তোভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়ে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রোজার আগে এমন কয়েকটি নামসর্বস্ব ভূয়া প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন এমন অপতৎপরতা বন্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়াও অপরাপর প্রতিষ্ঠানের ভুমিকা নেয়া জরুরী।
Leave a Reply