সংবাদ শিরোনামঃ
কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রয়াত দুই সদস্যের স্মৃতিচারণ ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত  শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত ইকরা একাডেমীর ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান  শ্যামনগরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন ও ২য় টাকি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে মতবিনিময় সভা  সাতক্ষীরা জেলা তরুন দলের ২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকি পালন  আটুলিয়া ইউনিয়নে ১৫ টি হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ৩,০০০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংকি বিতরণ  কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপি”র অফিস উদ্বোধন রমজাননগরে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু ন্যায্যতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে সিসিডিবির জলবায়ু সহনশীল জনগোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যে এনজিও গনমাধ্যমকর্মী ও ইউ পি সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ভূমিহীনদের জায়গায় ফেরত ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহায় পেতে মানববন্ধন 
শ‍্যামনগরে ইট ভাটায় অবাধে পুড়ানো হচ্ছে কাট

শ‍্যামনগরে ইট ভাটায় অবাধে পুড়ানো হচ্ছে কাট

উপকূলীয় অঞ্চল(শ্যামনগর) প্রতিনিধিঃ
 আইনের তোয়াক্কা না করে উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অদৃশ্য কারণে প্রশাসনও আছে নিরব।
উপজেলার জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে উঠা ‌এ সকল অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ক্লাসের সময় ইটভাটার কালো ধোঁয়া সরাসরি তাদের নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। চোখে বালু ও ধোঁয়া ঢুকে যায়। ফলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চোখেও সমস্যা হয়। ইটভাটার ট্রাক ও ভেকুসহ বিভিন্ন মেশিনের শব্দে ক্লাসের সময় তারা শিক্ষকদের কথা শুনতে পারে না। বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করার সময় ভাটার ট্রাকগুলো দ্রুতগতিতে আসে। এতে তারা ভয় পায়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়। এতে বৃদ্ধ এবং শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। ফলে এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছে ১৪টি ইটভাটা। এর মধ্যে ঝিকঝাক এবং সনাতনী পদ্ধতির ভাটাও রয়েছে। এসব ভাটার মধ্যে অধিকাংশরী নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোনো সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্সও নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাটা। উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর।
এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ এসব ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সব অবৈধ ইটভাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এসব অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে অধিকাংশ ভাটায় কয়লার সাথে তুষকাঠ মিশিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাথে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ, সোয়াবিনের গাঁথ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি।
রামজীবনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ইটভাটার পাশেই স্তূপ আকারে ফেলা রয়েছে জ্বালানি কাঠ। পাশের আরও একটি ঘরে রয়েছে তুষকাঠ।
উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জনবসতিপূর্ণ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে উঠেছে গাজী ব্রিকস নামক একটি ইটভাটা। ভাটার প্রবেশমুখে হাইকোর্টের একটি রিট পিটিশনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তোয়াক্কা না করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ এবং চারপাশে স্তূপ আকারে সাজানো রয়েছে জ্বালানি কাঠ।
এছাড়াও খানপুর এলাকার সাকিব ব্রিকসে গিয়ে দেখা যায় ভাটায় প্রবেশমুখে একটি বড় ঘরে সাজানো রয়েছে তুষকাঠ। এভাবে জনবসতি এলাকায় অবস্থিত ভাটায় জ্বালানি হিসেবে পুরোদমে কাঠ ও তুষকাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ভাটার কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণ করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসীর।
একইভাবে তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করা হচ্ছে উপজেলা সদরের সোনার মোড় এলাকায় এইচবি ব্রিকস ও আশা ব্রিকস, খানপুরে গাজী ব্রিকসসহ অধিকাংশ ইটভাটায়।
ইটভাটায় জ্বালানি কাজে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ভাটামালিকের নির্দেশে দিনে অল্প কয়লা ও সারারাত শুধু জ্বালানি কাঠ, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করে করে তাঁরা ইট পোড়াচ্ছেন।
ইটভাটায় জ্বালানির কাজে কয়লার বদলে কাঠের ব্যবহার প্রসঙ্গে গাজী ব্রিকস এর ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, প্রথমে কাটায় নতুন আগুন জ্বালানোর সময় ভাটার ভিতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাথে তুষকাঠ ব্যবহার করা হয়।
উপজেলা রামজীবনপুর এলাকার একটি ইটভাটার ম্যানেজার জানান, যশোরের নওয়াপাড়ার ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে কয়লায় পানি মিশিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে। এছাড়া দামও অনেক বেশি হাওয়ায় বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়াতে হচ্ছে। তাছাড়া কয়লা দিয়ে পোড়ালে ইটের দামও বেড়ে যায়। সেজন্য কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানো হচ্ছে। গত বছর আমাদের ভাটায় অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে শুধুমাত্র কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো একেবারেই অসম্ভব। তাই আমরা জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে তুষকাঠ ব্যবহার করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক ইটভাটার শ্রমিক বলেন, ভাটায় কাঠ ব্যবহার করলে প্রতিটি ইটে খরচ ১-২ টাকা কম হয়। এজন্য অধিক লাভের আশায় ভাটা মালিকরা কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করে।
হাটছালা গ্রামের কৃষক মনোতোষ মন্ডল (৬০) বলেন, অবাধে কাঠ পোড়ানোয় একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বন অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে কমছে জমির উর্বরাশক্তি। প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি ইটভাটায় যাচ্ছে। ফসলি জমির উপরের অংশ কেটে ফেলে মাটি ভাটায় আনা হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ধোঁয়া ও বালুকণার কারণে গাছপালা ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে সোনার মোড় এলাকার শোকর আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের ৩০ বছরের বসতভিটা। আগে একটি ভাটা ছিল। এখন চারপাশে চারটি ইটভাটা। ধুলাবালি আর ধোয়ায় ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘরের ভেতর ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বাস করছি। ইটভাটার ধোঁয়া ও বালুকণার কারণে বাড়িতে কোন গাছ-গাছালি বা খেতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, উপজেলায় অধিকাংশই ইটভাটাগুলো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে। তারপরও আবার ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে ফসলের ফলন বিপর্যয় ঘটছে,ইটভাটার কারণ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগীতায়- সুন্দরবন আইটি লিমিটেড