সংবাদ বিজ্ঞপ্তি (রাজশাহী)
বিশ্বের অন্যতম সবুজ ও নির্মল বায়ুর শহর রাজশাহীকে ‘প্লাস্টিক ও পলিথিন মুক্ত’ শহর করার দাবি জানিয়েছে ‘তারুণ্যের জয় হবে নিশ্চয়’ এ প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’। আজ রোববার দুপুরে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহমেদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনিসুর রহমান কে রাজশাহীকে ‘প্লাস্টিক ও পলিথিন মুক্ত’ শহর করতে ৫ (পাঁচ) দফা দাবি সম্বলিত পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’ সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মনুষ্যসৃষ্ট নানা উন্নয়ন দূর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব, যুদ্ধ, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি বিশ্ব আজ প্লাস্টিক দূষণ ও প্লাস্টিকের জন্য ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। প্লাস্টিকের জন্য আজ প্রাণবৈচিত্র্যসহ আমাদের সুন্দর পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্লাস্টিকের কারনে মানব স্বাস্থ্য মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে। একই সাথে জনজীবন ব্যাপকভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। প্লাস্টিক সমগ্র দুনিয়াকে গ্রাস করছে, দুনিয়ায় যেন বিধ্বংসী প্লাস্টিকের রাজত্ব চলছে। প্লাস্টিকের জন্য পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, চারিদিকে প্লাস্টিকের জন্য নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় এমনকি আমাদের এই সুন্দর নগরের পরিবেশকেও বিষাক্ত করে তুলছে। ‘ইউনাইটেড নেশনস’র পরিবেশ কর্মসূচির এক গবেষণায় জানা যায়, নব্বই শতাংশ পাখি এবং মাছের পাকস্থলী থেকে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। সেখানে আরো জানা যায় পৃথিবীতে প্রায় আটশত সামুদ্রিক প্রজাতির মধ্যে এ নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। প্লাস্টিক ১.৮ বিলিয়ন মেট্রিক টন গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন করছে, যা বিশ্বব্যাপী মোটের ৩.৪ শতাংশ, যার ৯০ শতাংশ নির্গমন হয়েছে প্লাস্টিক উৎপাদন এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর রূপান্তর থেকে।
একবার ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক প্যাকেজিং ক্ষেত্রে বিশে^ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার্য্য বলে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, মোট উৎপাদিত প্লাস্টিকের প্রায় ৩৬ শতাংশ প্যাকেজিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে খাদ্য এবং পানীয় পাত্রে একবার ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক অন্তর্ভুক্ত, যার ৮৫ শতাংশ ভাগাড় বা বিপজ্জনক বর্জ্য হিসাবে শেষ হয়। গাড়ি এবং ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে চিকিৎসা ডিভাইস এবং শিশুদের খেলনা সব কিছুতেই প্লাস্টিক পাওয়া যায়। এই পণ্যগুলিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা প্রাণী ও উদ্ভিদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবিত করছে। ভোগ্যপণ্য শিল্পে ব্যবহৃত প্লাস্টিক প্রতি বছর আনুমানিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে বলেও ‘ইউনাইটেড নেশনস’র পরিবেশ কর্মসূচির গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে স্মারকলিপিতে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের দেহে প্রবেশের কারণে ব্রেইন ড্যামেজ, অবেসিটি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ, এ্যাজমাসহ নারী বন্ধ্যাত্বে মারাত্বক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে দাবি করে তারা বলেন, দিনে দিনে প্লাস্টিক যেন আমাদের জীবন এবং পরিবেশে এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিশে^র অন্যতম সবুজ ও নির্মল বায়ুর শহর রাজশাহীতে সরকার নিষিদ্ধ অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ও প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। এ অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। এছাড়াও নগরীর জলাবদ্ধতার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ এবং মানবদেহের জন্যও অনেক ক্ষতিকারক। অন্যদিকে এ নিষিদ্ধ পলিথিন ও প্লাস্টিক আগুনে পুড়ালে সেটা থেকে কার্বণ ও মিথেনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। তা বায়ুর সঙ্গে মিশে পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে। অথচ রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে এ নিষিদ্ধ পলিথিন ও প্লাস্টিক প্রকাশ্যে বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই নগর এবং আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা এখন সময়ে দাবি। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০০২ এর ৬ (ক) ধারা এবং ২০২০ সালের ০৬ জানুয়ারি প্লাস্টিকের বোতলসহ সকল ‘ওয়ান টাইম’ প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশের মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চের দেয়া নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ৫ দফা দাবিগুলো হলো ঃ
(১) রাজশাহীতে অবিলম্বে একবার ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন বা পলিথিন সামগ্রীর সকলপ্রকার ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে।
(২) রাজশাহীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগ, বা পলিইথাইলিন পলিপ্রপাইলিনের তৈরি অন্য কোন সামগ্রী বা অন্য যে কোন সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে।
(৩) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০০২ এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
(৪) রাজশাহীকে প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণমুক্ত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।
(৫) প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণমুক্ত রাজশাহী গড়ে তুলতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে তুলতে ব্যাপক সচেতনতামূলক বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা করতে হবে এবং এ প্রচার-প্রচারণা কার্য সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় যুব সংগঠনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ‘তারুণ্যের জয় হবে নিশ্চয়’ এ প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’ এর পক্ষ থেকে সবুজ শুভেচ্ছা নিবেন। সংগঠনটি বিগত ২০১৫ সাল থেকে রাজশাহীতে নিরাপদ
Leave a Reply