দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করে ঘনীভূত হয়ে ধাপে ধাপে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। এতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বুধবার ভোরে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণাবর্তটি সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে সরে এসে একই এলাকায় অবস্থান করেছে।
এরই মধ্যে এটি একটি ক্রান্তীয় ঝড়ের পূর্বাভাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যেটি আজ থেকেই সাসপেক্ট ৯৯-বি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি ২২ মে নাগাদ লঘুচাপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ক্রমান্বয়ে এটি উত্তর পূর্ব দিকে সরে যেতে পারে এবং আগামী ২৫ মে নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এ উন্নীত হতে পারে।
এরই মধ্যে এর গতিবিধি পর্যালোচনা করে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা হলো- এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রমের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ভারতের ওডিসা রাজ্য থেকে শুরু করে মিয়ানমারের সিত্তিই, এই রেঞ্জের যেকোনো স্থান থেকে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকতে পারে সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রামের উপকূলভাগ।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি অনেক বেশি তীব্রতা সম্পন্ন হবে না অর্থাৎ সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারবে না। এর পরিবর্তে ঘণ্টায় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৫ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার থাকতে পারে। এর সর্বোচ্চ শক্তি উপকূলভাগ অতিক্রম করার সময় পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কোথায় আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি-
১। সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজারে সম্ভাবনা থাকবে শতকরা ৬৫ ভাগ
২। ওডিসার উত্তর থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত সম্ভাবনা ২৫ ভাগ
৩। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শতকরা ১০ ভাগ
বাংলাদেশে এর প্রভাব-
ঘূর্ণিঝড়টি যদি বাংলাদেশের পশ্চিমে তথা কলকাতা থেকে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে, তবে খুলনা ও বরিশালের উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েকফুট জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রায় সারাদেশেই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি যদি ওডিসা থেকে কলকাতার আশেপাশে আঘাত করে, তবে এর একটা বড় প্রভাব চট্টগ্রাম ও বরিশালে পড়বে। ভালো বৃষ্টিপাত হতে পারে। অপরদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারণে একটা দূর্বল কনভার্জেন্স অঞ্চল সারাদেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে, যার ফলে বর্ষাকালের মতো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি লক্ষ্য করা যেতে পারে প্রায় সারাদেশেই।
যদি এটি বরিশাল-চট্টগ্রাম এর মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে আছড়ে পড়ে, তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি সারদেশেই ভালো বৃষ্টিপাত পেতে পারে।
যদি চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফের মাঝে দিয়ে অতিক্রম করে তবে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ বৃষ্টিপাতের সম্মূখীন হতে পারে।
যদি এটি মিয়ানমারে যায়, তবে একমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল ব্যাতীত আর কোথাও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
জেলেদের জন্য সতর্কতা-
আগামী ২৪ মে থেকেই উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়া শুরু করতে পারে। তাই এ সময়ের পর থেকে সাগরে অবস্থান করা অনিরাপদ। তাই সমুদ্রগামী ট্রলার ও পর্যটকবাহী বোটগুলোকে বিএমডি ঘোষিত সতর্কতা সংকেত অনুসরণ করে নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।