নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
শরীরের রক্তের তেজ কমে যাওয়াই বয়স্ক বা প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নিউমোনিয়া, মাথাঘোরা, বুককাঁপা, হাতপা অবশ হওয়া, ঝেঁঝি লাগা, খাওয়া দাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়, সর্দি কাশি ও বাতজনিত রোগ বেশি দেখা দেয়। এছাড়াও প্রবীণদের গিরায় গিরায় ব্যথা, গ্যাস, জ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়।
আজ (২১ জুন ২০২৩) শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের খুটিকাটা গ্রামে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা।
খুটিকাটা জনকল্যান কৃষি সংগঠনের উদ্যোগে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এর সহযোগিতায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন খুটিকাটা জনকল্যান কৃষি সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান। বক্তব্য রাখেন, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য জহুরা হাবীব,সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফ হোসেন, বারসিক কর্মকর্তা মফিজুর রহমান প্রমুখ।
সভায় অংশ নিয়ে খুটিকাটা গ্রামের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য জহুরা হাবীব বলেন, ‘শুধু শারীরিক রোগ ব্যাধি নয়, প্রবীন ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যাটা আসলে বহুমাত্রিক। তারা মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় ভাবেও সমস্যায় জর্জরিত। আসলে একটা মানুষ যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তার নিজের মধ্যেই কিছু কিছু জিনিস দাঁনা বেধে ওঠে। যেমন- শারীরিক অসামর্থ, অসহায়ত্ব, পরনির্ভরশীলতা ও অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা। এগুলোর কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে শুরু করে নিজেকে অবাঞ্চিত, কখনও বা পরিবারের বোঝা মনে করেন। অনেক প্রবীণই বিষন্নতায় ভোগেন।’
পাখিমারা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফ হোসেন বলেন,‘ জীবনে বার্ধক্য আসবে এটা চরম সত্য। বার্ধক্য যখন আসে তখন শরীরের স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন-চুল পাকা, চুল পড়া, চোকে কম দেখা, শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, পেশি দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি। একই ভাবে খাবারের রুচি কমে যায়, এর সঙ্গে ঘুমও কমে যায়। গ্রামের প্রবীণদের মধ্যে আর্থিক অসচ্ছলতা বেশি। ভূমিহীন অসচ্ছল গ্রামের প্রবীণরাই আর্থিক দৈন্যদশাই বেশি ভোগেন। ফলে পরনির্ভরশীলতার কারনে খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সমস্যাটা গ্রাম পর্যায়ে অত্যন্ত জটিল। প্রবীণ বা বয়স্ক ব্যক্তিরা সম্মানীত। তারা দ্বিতীয় শিশু। আমাদের মনে রাখা উচিত, আজ যারা প্রবীণ তারাও অতীতে তার পরিবার,সমাজ,দেশ ও জাতির কল্যানে অনেকেই অনেক কিছ’ করে গেছেন। তাদের যেন কোন রকম অবহেলা করা না হয়। আমরা যারা নবীন তারা যেন ভূলে না যায় যে আমাদেরও একদিন এই অবস্থায় উপনীত হতে হবে। আজ যদি আমরা তাদের প্রতি অবহেলা করি,তা হলে আমাদের ও এই রকম অবহেলার শিকার হতে হবে।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘প্রথমেই মনে রাখতে হবে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী মানুষটির অক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তাকে একজন মানুষ হিসাবে দেখার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের আদর যত্ন দিয়ে শিশুদের ন্যায় প্রতিপালন করা এবং তাদের প্রতি মায়া,মমতা,ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। তাদের মধ্যে কোনো ভাবেই যেন এই ধারনা না জন্মায় যে তারা পরিবারের বোঝা।’ বক্তারা আরো বলেন,‘ প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসা লাভ করতে পারে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা,নিরীক্ষা ও ঔষধ বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে পায় রাষ্ট্রের তা নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পাদকঃ এম এ হালিম, মোবাইল: ০১৯১১-৪৫১৬৯৭,০১৭৮১১৫৮৯২৯ , Email- halim.nildumur@gmail.com.