শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বহু জল্পনা কল্পনার ও ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পূনরায় শ্যামনগরের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষীত যমুনা নদী পুনঃখনের শুভ উদ্বোধন হয়েছে। গতকাকল ৬ জুন (মঙ্গলবার) বিকাল ৪ টার সময় শ্যামনগর মহাশ্বশান সংলগ্ন যমুনা নদীর উপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে খনন কাজের শুভ উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি ও শ্যামনগর সদর (পৌরসভা) চেয়ারম্যান এ্যাড.এস এম জহুরুল হায়দার (বাবু)। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন, সলশ্লিষ্ট পাউবো সাতক্ষীরা দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তা স ম সালাউদ্দিন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব জি এম আকবর কবীর, উপজেলা রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি গাজী আল ইমরান, উপজেলা অনলাইন নিউজ ক্লাবের সভাপতি মারুফ হোসেন (মিলন), রিপোটার্স ক্লাবের সম্পাদক সরদার আমজাদ হোসেন (মিঠু), উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক তপন বিশ্বাস সহ জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে উদ্বোধনের পূর্ব পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং এর মাধ্যমে সকল অবৈধ স্থাপনা সরানোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১-এর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায় দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে) ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদীর ১৫ দশমিক ৯০ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে খননকাজ শুরু করে ৩০ মের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে,তাছাড়া তলদেশে ২৮ ফুট ও উপরের অংশে ৮০-১০০ ফুট প্রশস্ত রেখে খনন করার কথা কিন্তু শ্যামনগরে অবৈধ স্থাপনাকারীদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অফিসার অসামাপ্ত ও ত্রুটিপূর্ণ তালিকা প্রকাশ করে খাল খনন করা হলে স্থানীয় জনগন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ চলমান কাজে বাঁধা দিয়ে গনমাধ্যমে প্রকৃত অবৈধ স্থাপনাকারীদের সনাক্তের মাধ্যমে যমুনা নদী খননের দাবী জানান। অবশেষে মাননীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার ও শ্যামনগর সদর চেয়ারম্যান এস এম জহুরুল হায়দার বাবু পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট অফিসারকে ত্রুটিপূর্ণ তালিকা সংশোধন করে ডিজাইন সিডিউল মোতাবেক যমুনা নদী খননের নির্দেশনা প্রদান করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিত পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ স্থাপনাকারীদের তালিকা সংশোধনসহ যমুনা নদী খননের মেয়াদ বৃদ্ধি করে খনন কাজের উদ্বোধনের ব্যাবস্থা করেন। নদী খননে অনিয়মের কথা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে কোনো রকম অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।’
উদ্বোধনে এ্যাড জহুরুল হায়দার বাবু বলেন, শ্যামনগরের লক্ষ মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা শ্যামনগরের প্রাণ যমুনা নদী পূনঃখনন করা। তিনি আরোও বলেন সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে অবৈধ স্থাপনাকারীদের তালিকা মোতাবেক ডিজাইন ও সিডিউল অনুযায়ী যমুনা নদী খনন করতে হবে। এবার কোন ষড়যন্ত্র হলে শ্যামনগরের মানুষ কোন ভাবে মেনে নেবে না এবং শ্যামনগরে আবারও আন্দোলন শুরু হবে। তিনি বলেন, আমরা যমুনা খননের পক্ষে সুতারাং যমুনা নদী খনন বাঁধা সৃষ্টিকারী যতই শক্তিশালী হোকনা কেন তাকে প্রতিহত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সর্বাত্বক সহযোগীতা করব।
মুলতঃ আদি যমুনা নদীর মরণ শুরু হয় শ্যামনগর সদরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক নির্মানের সময় শ্যামনগরের (মিঠা)চন্ডিপুরের কাছে যমুনা নদীর উপর ১০ ফিটের স্লুইজ গেট নির্মান করা হয়। এখানে নদীর প্রস্ততা ১০০ ফুটের বেশী। এ গেটের এলাকা হতে শুরু করে নকিপুর শশ্মাষের কাছ পর্যন্ত যমুনা সবচেয়ে বেশী দখল হয়ে আছে। নকিপুর চন্ডিপুর এলাকায় জনৈক ব্যক্তি নিজস্ব বাড়ী বানানোর সময় মূল নদীর অর্ধেক দখল করে এবং নিজস্ব ইটের ভাটা (বর্তমানে বকুলের ভাটা) পরিবহনের জন্য যমুনা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বেঁধে দেয়। ইতিমধ্যে মানববন্ধন ও স্মারকলিপিতে স্থানীয় জনগন ৭ দফা দাবীতে উল্লেখ করে করেন যে : ১.শ্যামনগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আদি যমুনা নদীর সীমানা চিহ্নিক করা ও অবৈধ্য স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। ২. নকিপুর শশ্মান থেকে চন্ডিপুর ব্রীজ পর্যন্ত সহ সমগ্র ৩য় খন্ডের আদি যমুনা নদী দ্রুত খনন করতে হবে। ৩. নকিপুর শশ্মানের সামনে ব্রীজ করতে হবে। ৪. চন্ডিপুরের কালর্ভাট ভেঙ্গে নদীর প্রশস্তা অনুযায়ী ব্রীজ করতে হবে। ৫. মাদার সংযোগস্থল হতে ৫ম ও ৪ র্থ খন্ডের সকল মাটির রাস্তা অপসারন করতে হবে। ৬. আদি যমুনার নদীর দু’ধার দিয়ে রাস্তা তৈরী করা , সেখানে বনায়ন করা ও বৈকালিক এবং প্রাত:কলিন চলাচলের পথ উম্মুক্ত করতে হবে । ৭. পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক আদি যমুনা নদীকে খাল হিসেবে টানানো সাইনবোর্ড অপসারণ করে নদী হিসেবে লেখার সাইন বোর্ড ব্যবস্থা করা।
সম্পাদকঃ এম এ হালিম, মোবাইল: ০১৯১১-৪৫১৬৯৭,০১৭৮১১৫৮৯২৯ , Email- halim.nildumur@gmail.com.