শ্যামনগর উপকূলের রমজাননগর মুন্ডা পাড়ায় চলছে ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াইয়ের আসর।সবার মাঝে দারুন উৎসবের আমেজ, অসংখ্য মানুষের সমাগম।
শত মানুষের ভিড়ে ঠাসা ঐয়দানে সকলের চোখের সামনে বাঁধা ধারালো ছুরির আঘাতে একের পরে এক মোরগ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।আবার অনেক মোরগ অস্ত্রের আঘাতে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি লড়াইয়ে বেজে উঠছে মুহুর্মুহু হাততালি।
বৃহস্পতিবার ২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পুজা উপলক্ষে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার রমজান নগর ভেটখালী মুন্ডাপাড়ায় একের পর এক লুটিয়ে পড়তে দেখা গেল কয়েকটি মোরগকে। প্রতি বছর মকর-সংক্রান্তি এবং সরস্বতী পুজোর দিনে এমন মোরগ-লড়াই দেখতে মেতে ওঠেন
বিভিন্ন এলাকার মানুষেরা।
বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় হাজার খানেক মোরগ আনা হয়েছিল সেখানে।
স্হানীয়রা জানান, টুসু উৎসবের অঙ্গ হিসাবে পৌষ পার্বণ এবং সরস্বতী পুজো উপলক্ষে মোরগ লড়াইয়ের আসর বসে ভেটখালী এই মুন্ডা পাড়ায়।
মোরগের পায়ে ধারাল দুধ ছুরি বেঁধে দেওয়া হয়।
একটার উপরে একটা ঝাঁপিয়ে পড়ে বড়শড় চেহারার দুই প্রতিপক্ষ মোরগ। শেষমেশ রক্তারক্তি কাণ্ড কিন্তু তা দেখে হইহই রইরই করেন দর্শকেরা চটাপট হাততালি পড়ে।
আয়োজক কমিটি নেতৃবৃন্দ বলেন, “বাবা দাদার মুখে শুনেছি, এক সময়ে জমিদারেরা বদ্ধভূমিতে প্রজাদের ঢুকিয়ে মল্লযুদ্ধ দেখে আনন্দ পেত। তা দেখে মনে মনে ক্ষোভে ফেটে পড়তো গরিব প্রজারা। কিন্তু লেঠেল বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে পারত না। সেই আক্রোশ থেকেই আদিবাসী মানুষ ঠিক করেন, মোরগ লড়াইয়ের মাধ্যমে এর ‘জবাব’ দেবেন। ক্রমে ক্রমে অনেক পরিবর্তন এসেছে এই লড়াইয়ের নিয়ম-কানুনেও। এখন মোরগ লড়াইয়ে বহু টাকার বাজি খেলা হয়। জয়ী মোরগের মালিকেরও মেলে বীরের সম্মান, রাতভর হাড়িয়া খেয়ে চলে নাচগানের অনুষ্ঠান।
মোরগ লড়াইয়ের আসরে দেবব্রত সর্দার জানালেন, সাধারণ মোরগের দাম ৫-৬ শো টাকা। সেখানে রাঁচির একটি মোরগের দাম এ আশরে ১২/১৫শ টাকা হয়ে থাকেন।
পৌষ সংক্রান্তিতে কিংবা সরস্বতী পুজোর দিন মোরগ কিনে সারা বছর তাকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয় লড়াইয়ের জন্য। স্থানীয় “আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে মোরগ লড়াইয়ে জয়ী হওয়া খুবই গর্বের ব্যাপার মনে করেন।
মোরগ লড়াই খেলার আশর।