আল-হুদা মালী,
সাতক্ষীরা জেলা, শ্যামনগর উপজেলার বৃহত্তম ইউনিয়ন গাবুরা। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে চারিদিকে নদীবেষ্টিত এই ইউনিয়নটির অবস্থান এখানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। গাবুরায় নেই কোনো আধুনিক মানের সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা হাসপাতাল।
গাবুরার মানুষের স্থানীয়ভাবে একমাত্র ভরসা গাবুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ৪টি ক্লিনিক এবং গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা। ক্লিনিকগুলোতে নেই কোনো অভিজ্ঞ কর্মী ও পর্যাপ্ত ঔষধ। সরকারিভাবে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষকে সামান্য অসুস্থতায় চিকিৎসার জন্য যেতে হয় শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।্য রোগীকে নিয়ে পাড়ি দিতে হয় এলাকার দীর্ঘ আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তা ও নদী পথে। যার ফলে অনেক রোগীর স্বজনরা দুর্গম ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া কষ্টসাধ্য হওয়ায় রোগীকে হাসপাতালে নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে হওয়ায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত ও অধিক সময়ের কারণে গর্ভবতী নারীর পথে গর্ভপাত, মৃত্যু এবং অন্যান্য রোগীদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয়রা বলেন, গাবুরা ইউনিয়ন বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের কাছাকাছি হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙ্গন ও লবণাক্ততায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই আক্রান্ত হয়ে থাকে।২০০৯ সালের ২৫ শে ঘূর্ণিঝড় আইলা গাবুরাকে বিধ্বস্ত করায় সে সময় চিকিৎসার অভাবে অনেক প্রাণহানিও ঘটেছিল। এমতাবস্থায় দুর্যোগপ্রবণ গাবুরাতে একটি ২৫ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সরকারি হাসপাতাল জরুরিভিত্তিতে নির্মাণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। এতে করে নৌকায় বা দূরের পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদর বা জেলা শহরে যেতে হবে না এবং সময়মত সুচিকিৎসা পাওয়া গেলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হারও কমবে বলে আশা করেন তারা। এছাড়াও গাবুরার পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বাসিন্দাদেরও চিকিৎসার জন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। সুতরাং গাবুরাতে একটি হাসপাতাল হলে তারাও এখানে সহজে চিকিৎসার জন্য আসতে পারবে বলে মনে করেন।
গাবুরার জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল জানান,উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা বর্তমানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। সেখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত চিকিৎসার সরঞ্জামের অভাবে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও সঠিকভাবে পাচ্ছেন না। আমরা বারবার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি হাসপাতালের দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একটি সরকারি হাসপাতাল হলে এই অঞ্চলের মানুষ প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসবে।
আরো বলেন, অনেক সময় জরুরি রোগীকে নদী পার হয়ে শ্যামনগরে নিয়ে যেতে হয়, যা সময় সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। গাবুরা ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের এই দাবি পূরণ হলে উপকূলীয় এলাকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা স্থানীয়দের।
একজন স্থানীয় সমাজকর্মী বলেন, “গাবুরা ইউনিয়নটি চারদিক দিয়ে নদী বেষ্টিত হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত কষ্টকর। জরুরি সময়ে রোগী নৌকা বা ট্রলারের উপর নির্ভর করতে হয়, যার ফলে অনেক সময় রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। তিনি আরো বলেন, আমরা বহু বছর ধরে হাসপাতালের দাবি জানিয়ে আসছি। গাবুরার মানুষেরও তো বাঁচার অধিকার আছে! দ্রুত সরকারি হাসপাতাল স্থাপন না হলে এখানে স্বাস্থ্যসেবার সংকট আরও ভয়াবহ হবে। এ বিষয়ে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জি,এম, মাছুদুল আলম বলেন, “গাবুরার মানুষদের চিকিৎসা পাওয়ার মতো কোনো সুযোগ নেই। উপকূলীয় এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন অসুস্থ ও গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্করা। তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়ে জোর দাবি জানালেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। কিন্তু আমি মনে করি গাবুরা ইউনিয়নে একটি ২৫ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল স্থাপন করলে গাবুরা ও কাছাকাছি ইউনয়ের মানুষের দীর্ঘদিনের চিকিৎসা সংকট দূর হবে।
Leave a Reply